গাওয়া ঘি খাওয়ার উপকারিতা
ঘি এমন একটি উপাদান যা আমাদের অনেকের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় একটি বিশেষ স্থান দখল করে রয়েছে। গাওয়া ঘি আমাদের উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার যা শুধু রান্নার স্বাদ বাড়ায় না, বরং স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য যুগ যুগ ধরে সবার কাছে জনপ্রিয়।
বিশেষ করে আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী সকল প্রকার রান্নার ক্ষেত্রে ঘির ব্যবহার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
আজকের ব্লগে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো গাওয়া ঘি কী, ঘি খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং কীভাবে আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য দৈনন্দিন জীবনে ঘি ব্যবহার করতে পারি।
গাওয়া ঘি কি ?
অনেকেই মনে করেন ঘি তো ঘি-ই, আলাদা করে গাওয়া ঘি কেন? আবার কেউ কেউ মনে করেন, গ্রামে তৈরি ঘি-ই বোধহয় গাওয়া ঘি। কিন্তু এই ধারণাগুলো আসলে পুরোপুরি সঠিক নয়। গাওয়া ঘি এবং সাধারণ ঘি-এর মধ্যে রয়েছে এক বিশাল পার্থক্য।
গাওয়া ঘি বলতে সেই ঘি-কে বোঝানো হয়, যা শুধুমাত্র দেশি গরুর দুধ থেকে তৈরি হয়। দেশি গরুর দুধ থেকে বানানো ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে জ্বাল দিয়ে এই ঘি প্রস্তুত করা হয়। এটি সাধারণ ঘি-এর তুলনায় বেশি পুষ্টিকর এবং স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়।
গাওয়া ঘি-এর সঠিক পরিচয়
যে কোন ঘি গাওয়া ঘি নয়। অনেক সময় বাজারে বিদেশি জাতের গরুর দুধ থেকে তৈরি ঘি-কে গাওয়া ঘি বলে প্রচার করা হয়। আমাদের দেশে এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিদেশি জাতের গরু অথবা মিশ্র জাতের গরু পালন করা হয়। এই গরুর দুধ থেকে তৈরি ঘি এর পুষ্টি গুণ খাঁটি গাওয়া ঘি-এর সমান নয়।
গাওয়া ঘি-এর উৎপত্তি এবং গুণাগুণ নির্ভর করে দেশি গরুর জাত এবং তাদের খাদ্যাভ্যাসের ওপর। দেশি গরুর দুধ সাধারণত গাঢ়, ঘন এবং প্রাকৃতিক পুষ্টিগুণে ভরপুর। গাওয়া ঘি-এর প্রসঙ্গ উঠলেই পাবনার নাম সবচেয়ে আগে আসে।
গাওয়া ঘি এর পুষ্টিগুণ :
গাওয়া ঘি শুধুমাত্র খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করে না, এটি পুষ্টিগুণের এক দারুণ উৎস। খাঁটি দেশি গরুর দুধ থেকে তৈরি এই ঘি আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
প্রতি ১০০ গ্রাম ঘিতে যে সকল পুষ্টিগুণ থাকে :
- ক্যালরি: ৮৯৭ ক্যালরি
- ফ্যাট: ৯৯.৮ গ্রাম
- ভিটামিন এ: ৩৩৫০ আইইউ
- ভিটামিন ই: ২.৮ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন ডি: ১.৫ মাইক্রোগ্রাম
- ওমেগা-৩ : ১.৫ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম : ৪ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম : ৩ মিলিগ্রাম
গাওয়া ঘি খাওয়ার উপকারিতা
হাজার বছর ধরে আয়ুর্বেদ এবং প্রাচীন চিকিৎসা শাস্ত্রে গাওয়া ঘিকে পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর উপাদান হিসেবে উল্লেখ করেছে। নিচে গাওয়া ঘি খাওয়ার উপকারিতাগুলোর বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১.হজমশক্তি বাড়ায়:
গাওয়া ঘি আপনার হজম প্রক্রিয়াকে সহজ ও দ্রুত করতে সাহায্য করে। এর অন্যতম কারণ হল এতে থাকা প্রাকৃতিক বিউটারিক অ্যাসিড। এই উপাদানটি পেট ভালো রাখে এবং হজম ক্ষমতা উন্নত করে। খাওয়ার পর এক চামচ গাওয়া ঘি খেলে হজম শক্তি বাড়ে এবং পেটের গ্যাস বা অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর হয়।
২. ইমিউনিটি বৃদ্ধি করে
গাওয়া ঘি-তে ভিটামিন এ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।গাওয়া ঘি-তে থাকা ভিটামিন এ দেহের সেলুলার ইমিউনিটি শক্তিশালী করে। ঘি-তে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের শক্তি উৎপাদন এবং রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে।
৩. ত্বক উজ্জ্বল করে
ঘি এর মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক ফ্যাট এবং পুষ্টি উপাদানগুলো ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে , যা ত্বককে উজ্জ্বল ও কোমল করে তোলে।গাওয়া ঘি-তে থাকা অ্যান্টি-এজিং উপাদান ত্বকের বলিরেখা ও বয়সের ছাপ কমায়।
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণ করে
অনেকেই মনে করেন গাওয়া ঘি খেলে ওজন বাড়ে। এটি একদম ভুল ধারণা। গাওয়া ঘি শরীরে মেটাবলিজম উন্নত করে এবং ভালো ফ্যাটের মাধ্যমে শক্তি জোগায়, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
৫. মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়
গাওয়া ঘি ব্রেন বুস্টার হিসেবে কাজ করে। এটি স্মৃতিশক্তি বাড়ায় এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
৬. হার্ট ভালো রাখে
গাওয়া ঘি হার্টের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে। এটি রক্তে ভালো কোলেস্টেরলের (HDL) মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের (LDL) মাত্রা কমায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
৭. হাড়কে মজবুত করে
গাওয়া ঘি-তে থাকা ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণ করতে সাহায্য করে এবং ভিটামিন কে হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখে । ক্যালসিয়াম হাড়ের প্রধান উপাদান হওয়ায় হাড়কে শক্তিশালী করে তোলে।
৮. চুলের পুষ্টি জোগায়
গাওয়া ঘি চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।পাশাপাশি চুল পড়া কমাতেও সাহায্য করে।
৯. শিশুদের জন্য উপকারী:
গাওয়া ঘি শিশুদের জন্য একটি আদর্শ পুষ্টিকর উপাদান। এটি শরীরের বৃদ্ধি ও মস্তিষ্কের গঠন এবং মেধা বিকাশে সাহায্য করে।
গাওয়া ঘি এর ব্যবহার :
গাওয়া ঘি স্বাদ এবং পুষ্টি বাড়ানোর পাশাপাশি শরীর এবং ত্বকের জন্যও অত্যন্ত উপকারী।ঘি এর সঠিক ব্যবহার আপনাকে অনেক ধরনের শারীরিক ও মানসিক উপকার এনে দিবে। নিচে গাওয়া ঘি ব্যবহারের কিছু উদাহরণ দেয়া হল :
১. রান্নায় ঘি এর ব্যবহার
- ডাল ও ভাতের সঙ্গে: এক চামচ গাওয়া ঘি মিশিয়ে ডাল বা গরম ভাত খেলে খাবারের স্বাদ বেড়ে যায় এবং হজমও ভালো হয়।
- সবজি ও ভাজায়: সবজি রান্নার শেষে বা ভাজা খাবারে সামান্য গাওয়া ঘি দিলে এটি আরও সুস্বাদু হয়।
- রুটি বা পরোটা: অনেকেই সকালের নাস্তায় রুটি বা পরোটা খেতে পছন্দ করেন। সকালের নাস্তায় পাশে রাখুন খাঁটি ঘি। ঘি দিয়ে পরোটা ভাজলে তা হবে আরও বেশি স্বাস্থ্যকর। তেলের বিকল্প হিসেবে রান্নায় ঘি ব্যবহার করা যায়।
- ঘি খাবারে স্বাদ ও ঘ্রাণ বাড়ানোর পাশাপাশি পুষ্টিগুণও বৃদ্ধি করে। তাই বাঙালি ঐতিবাহী সকল রান্নায় বা খাবারে যেমন- খিচুড়ি, বিরিয়ানি, পোলাও, মাংস এবং কাচ্ছি রান্নায় গাওয়া ঘি ব্যবহার করতে পারেন।
২. সৌন্দর্য চর্চায় ঘি এর ব্যবহার
ঘি সরাসরি ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রেখে ত্বককে কোমল এবং উজ্জ্বল করে। এছাড়া চুলের গোড়ায় ঘি ম্যাসাজ করলে চুল পড়া কমে এবং চুল মজবুত হয়।
প্রতিদিন কতটুকু ঘি খাবেন?
একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন ১-২ টেবিল চামচ গাওয়া ঘি খেতে পারেন।
শিশুদের জন্য তাদের বয়স এবং শারীরিক কার্যক্রম অনুযায়ী ১ চা চামচ যথেষ্ট।
খাঁটি গাওয়া ঘি কোথায় পাবেন ?
বাজারে প্রচুর ভেজাল বা মিশ্রিত ঘি পাওয়া যায়, যা গাওয়া ঘি-এর প্রকৃত গুণাগুণ দিতে পারে না।পাশাপাশি হাইব্রিড জাতের গরুর দুধ থেকে তৈরি ঘি অনেকে গাওয়া ঘি বলে চালিয়ে দিচ্ছে। সঠিক গাওয়া ঘি পেতে হলে নিশ্চিত হতে হবে এটি খাঁটি দেশি গরুর দুধ থেকে তৈরি হয়েছে কিনা।
আপনি যদি খাঁটি এবং স্বাস্থ্যকর গাওয়া ঘি খেতে চান, তবে আপনার জন্য ফিট ফর লাইফ সুদীর্ঘ ৪ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করে চলছে। পাবনার পদ্মা চরে প্রাকৃতিক পরিবেশে, যেখানে দেশি গরুগুলো সবুজ ঘাস খেয়ে ও সূর্যের আলোতে চরে বেড়ায়, সেখানকার দুধ সংগ্রহ করে নিয়মিত প্রিমিয়াম গাওয়া ঘি তৈরি করি। এই গাওয়া ঘি ঔষধি গুণে ভরপুর, যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং বাংলাদেশের একমাত্র A2 ঘি।আপনি নিশ্চিন্তে ফিট ফর লাইফ এর গাওয়া ঘি ব্যবহার করতে পারেন।
গাওয়া ঘি শুধু রান্নার একটি উপাদান নয়, এটি আমাদের স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের সঙ্গী। এর পুষ্টিগুণ, স্বাদ এবং ঘ্রাণ যেমন খাবারকে পরিপূর্ণ করে, তেমনি শরীরের ভেতর ও বাহির উভয়ের সুস্থতা নিশ্চিত করে।
গাওয়া ঘি এর নিয়মিত এবং সঠিক ব্যবহার হজমশক্তি বাড়ানো, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং ত্বক ও চুলকে ভালো রাখার মতো অসংখ্য উপকারিতা নিয়ে আসে। তবে খাঁটি দেশি গরুর দুধ থেকে তৈরি গাওয়া ঘি স্বাস্থ্যকর ও প্রাকৃতিক পুষ্টির উৎস।
আপনার এবং আপনার পরিবারের জন্য খাঁটি গাওয়া ঘি কিনতে ভিজিট করুন Fit For Life। খাঁটি পণ্যের নিশ্চয়তা দিয়ে আমরা আছি আপনার পাশে।